বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্রিকেটকে আরো ছড়িয়ে দিতেই ক্রিকেট দর্পণ এর পথ চলা শুরু হয় ২০১০ এর জুনে। আর সেই থেকে আজ ২০২৩ এর এপ্রিলে এসে ক্রিকেট দর্পণ আজো তাদের সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকেই এই বাংলার ক্রিকেট ক্রিকেটারদের নিয়ে জেলা থেকে জেলান্তরে কাজ করে চ'লেছে। আর এটা কোনো দাবী বা কারো কোনো স্বীকারোক্তি নয়, বরং এটাই বলা যায়, সেই কথার মধ্যে এতটুকু ভনিতা বা বাগাম্বড়িতা নেই।

ঢাল তলোয়ার হীন একটি পরিবার কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হ'য়েও শুধুমাত্র পরিকল্পনা, ইতিবাচক সদ্ভাবনা ও অদম্য প্রচেষ্টাকে সম্বল করে সম্পূর্ণ স্বকীয়তা আর নিজস্বতা দিয়ে কাজ করে চ'লেছে ক্রিকেট দর্পণ। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, সেই চলায় গতির মন্থরতা অবশ্যই আছে, কিন্তু তাই ব'লে বিগত ১৩ বছরে তাদের সেই চলার গতিতে কখনো স্থবিরতা নেমে আসেনি। বরং সেই চলার পথ নির্দেশ ছিল এবং আছে সামনের দিকে, আর ধীরে হ'লেও সেই চলনে এক নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতাও বজায় রয়েছে।

আজ থেকে প্রায় ১৩ বছর আগে ক্রিকেট দর্পণ নামাঙ্কিত একটি থ্রী ফোল্ড পত্রিকা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান রূপে ক্রিকেট দর্পণ পথ চলা শুরু করে ২০১০ এর ১৩-ই জুনে। যে প্রতিষ্ঠানের কাজ হ'য়ে উঠেছিলো ক্রিকেট অঙ্গনে ঘটে চলা বয়েস ভাঁড়ানো থেকে নাম ভাঁড়িয়ে ক্রিকেটার খেলানো থেকে একাধিক দূর্নীতির প্রতিরোধে প্রতিবাদী কলম ধরা ও প্রত্রিকায় প্রকাশ করা। কিন্তু এখানেই থেমে থাকা যায়নি, বরং ক্রিকেট অঙ্গনে ঘটে চলা সেই সব অনৈতিক কাজের বাইরে গিয়েও যে সদিচ্ছা নিয়ে টুর্ণামেন্ট করা যায়, সেটা প্রমাণ করতেই এবং ক্রিকেট দূর্নীতির প্রতিরোধে হাতে কলমে মাত্র‌ এক বছরের মধ্যে ক্রিকেট দর্পণ-ও টুর্নামেন্ট আয়োজক রূপে পথ চলা শুরু করে।

প্রথম বছরে(২০১১-১২ মরশুমে)মাত্র ১টি টুর্ণামেন্ট আয়োজন করার মধ্যে দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জটাই নিতে হ'ল। আর প্রথম বছরের টুর্ণামেন্ট আয়োজনের পরেই তারা অর্থাৎ ক্রিকেট দর্পণ বুঝতে পেরেছিলো ক্রিকেট দর্পণ যদি ভবিষ্যতে তাদের টুর্ণামেন্টকে ধারাবাহিক ভাবে ও একটি নির্দিষ্ট মান বজায় রেখে করতে চায়, তবে অবশ্যই তাদেরকে নিজস্ব আম্পায়ার গড়ে তোলার কাজটাও নিয়মিত ভাবে করে যাওয়া প্রয়োজন। নিজস্ব আম্পায়ার ছাড়া টুর্ণামেন্ট আয়োজন,যা কখনোই সম্ভব নয়।

আর যেমন ভাবা তেমন কাজ, ২০১২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মাঝে এক বছর করোনা তথা কোভিড-১৯ এর কারনে বন্ধ থাকলেও বিগত এগারো বছরে ক্রিকেট দর্পণ প্রতি বছর ধারাবাহিক ভাবে আম্পায়ার ট্রেনি কোর্স করে আসছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ফ্রি কোর্স। এই মুহূর্তে দুই চব্বিশ পরগণা, দুই মেদিনীপুর সহ নদিয়া, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, ইত্যাদি জেলাগুলি থেকে এসে ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত দুমাস ব্যাপী এই আম্পায়ার ট্রেনিং কোর্সে প্রতি বছর একাধিক ছেলে ও মেয়েরা ক্লাস করে গেছে। এখানকার আম্পায়ার এডুকেটর হিসেবে যেমন উদয় হালদার ও স্বপণ কুমার ঘোষ রয়েছেন তেমনি ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত এই ফ্রি আম্পায়ার ট্রেনিং কোর্সের প্রধান আম্পায়ার এডুকেটর হিসেবে তারা পেয়েছে প্রাক্তণ আন্তর্জাতিক আম্পায়ার তথা প্রাক্তণ বিসিসিআই আম্পায়ার এডুকেটর ফ্রান্সিস গোমস মহাশয়কেও।

প্রসঙ্গত আরো বলার এটাই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সেই সব ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইতিমধ্যেই অন্তত পঞ্চাশ (৫০) জন পাশ করা আম্পায়ার যেমন আছেন, তেমনি‌ ক্রিকেট দর্পণ এর এই আম্পায়ার ট্রেনিং কোর্স পাশ করা আম্পায়ারদের মধ্যে এযাবৎ দু বারের সিএবি আম্পায়ার পরিক্ষায় যে ১৪ জন পরীক্ষা দেন, তাদের প্রত্যেকে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ক্রিকেট দর্পণ আম্পায়ারের পাশাপাশি সিএবি আম্পায়ার রূপেও স্বীকৃতি পেয়েছেন।

অন্যদিকে ২০১১-১২ মরশুমে যে ক্রিকেট দর্পণ মাত্র ১টি টুর্ণামেন্ট (সাব-জুনিয়ার অনূর্ধ্ব-১৪) দিয়ে টুর্ণামেন্ট আয়োজক হিসেবে পরিচিতি পায়, ২০২৩ এ এসে সেই ক্রিকেট দর্পণ সাতটি টুর্ণামেন্ট আয়োজন করছে। যারা প্রথম বছরে ৬৭ টি ম্যাচ ও পুরো মরশুমে ৬৭ দিন এর মধ্যেই তাদের মরশুম সিমিত রেখেছিলো, সেই ক্রিকেট দর্পণ ২০২২-২৩ মরশুমে সর্বোমোট ৩০০-র কাছাকাছি ম্যাচ যা সাকুল্যে কমবেশি ২৩০ দিনের মরশুমে এসে নির্ধারিত হতে চলেছে। এই মুহূর্তে নার্সারী (অনূর্ধ্ব ১২) , সাব-জুনিয়ার(অনূর্ধ্ব ১৫), অনূর্ধ্ব ২০-র জুনিয়ার ওয়াডে টু ইনিংস টুর্ণামেন্ট ছাড়াও দু'টি টুডেজ টু ইনিংস টুর্ণামেন্ট, মহিলা টি টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট এবং স্কুল টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা তাদের বাৎসরিক কাজের মধ্যেই পড়ে (কোভিড-১৯ কারনে স্কুল টুর্ণামেন্ট ৩ বছর বন্ধ থাকার পর ২২-২৩ মরশুমে পুনরায় করার কথা ভাবা হচ্ছে)।

পাশাপাশি ক্রিকেট দর্পণ এর অন্যতম আরো একটি কর্মকাণ্ড হ'ল বাৎসরিক পুরষ্কার বিতরণ ও গুণীজনদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। বাস্তবিকই ক্রিকেট দর্পণ এর কাছে এই দিনটি এক মিলনোৎসবের নামান্তর। আর ২০১১ থেকে ২০২২ এর মধ্যবর্তী সময়ে মাত্র এক বছর(২০২০) কোভিড-১৯ এর কারন এই অনুষ্ঠান করা না গেলেও ২০২০-২১ এ এসে ঐ দুই মরশুমের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান একসাথে ২০২১ করা হয়।

প্রসঙ্গত জানানো যায় ক্রিকেট দর্পণ পুরষ্কার বিতরণ মঞ্চ থেকে প্রতিবছর গুনীজন সম্মাননা জ্ঞাপণ প্রেক্ষিতে যে স্মারক মানপত্র দেওয়া হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি "ক্রিকেট দর্পণ মরণোত্তর ক্রীড়ারত্ন সম্মাণ "...যা এখনো পর্যন্ত প্রতি দুবছর অন্তর করে একাধিক ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব- গনের বাড়ির মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই মাণপত্র যাঁরা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রাক্তণ ক্রিকেটার হিসেবে আছেন- প্রয়াত শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (সুঁটে ব্যানার্জী), এছাড়াও পঙ্কজ রায়, পি. সেন, আর প্রশাসক হিসেবে যাঁরা আছেন, তাঁরা হ'লেন জগমোহন ডালমিয়া, আশুতোষ কর, বিশ্বনাথ দত্ত- এবং জয়ন্ত চ্যাটার্জী-দের (কাচ্চু-বাবু)মতো ক্রীড়া ব্যক্তিত্বগণও।এর পাশাপাশি সেই একই মঞ্চ থেকে আরো যে সকল বিশেষ স্মারক সম্মাণ হিসেবে মানপত্র দেওয়া হয় সেগুলির মধ্যে আরেকটি হ'ল-"ক্রিকেট দর্পণ জীবনকৃতি সম্মাণ" (২০১৮ থেকে)। আজ পর্যন্ত যাঁরা এই সম্মাননা জ্ঞাপণ মানপত্র পেয়েছেন তারা হ'লেন- প্রাক্তণ ভারতীয় ক্রিকেটার অরুণ জগদীশ লাল, ক্রীড়া প্রশাসক ও প্রাক্তণ ক্রীড়ামন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলী, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আম্পায়ার ও বিসিসিআই আম্পায়ার এডুকেটর হিসেবে ফ্রান্সিস গোমস , এবং সফল ক্রিকেট প্রশিক্ষক হিসেবে জয়ন্ত ভৌমিক এর মতো ক্রীড়া ব্যক্তিত্বগণ।

প্রসঙ্গত জানানো যায়, ক্রিকেট দর্পণ এর পক্ষ্য থেকে তাদের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান মঞ্চকে ২০১৬ থেকে বাংলা তথা ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে একই ভাবে উচ্চারিত ও ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে যিনি স্বীকৃত সেই প্রবাদ প্রতীম ক্রীড়া প্রশাসক "জগমোহন ডালমিয়া-কে স্মরণ করে তাঁর নামাঙ্কিত মঞ্চ রূপে মেনে সেই পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চের নাম হয় "জগমোহন ডালমিয়া মঞ্চ"

পাশাপাশি ২০১৮ থেকে এই একই মঞ্চ থেকে আরো একটি পুরষ্কার দেওয়া শুরু হয় তা হ'লো- বাংলার সেরা ক্রীড়া প্রশাসক এর পুরস্কার, যা প্রয়াত ক্রিকেট প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়া-র নামাঙ্কিত- "জগমোহন ডালমিয়া দি বেস্ট স্পোর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইন বেঙ্গল" আর এই স্মারক সম্মাণটি এ যাবৎ যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যে- বিশ্বরূপ দে, পৃথ্বীজিৎ ঘোষ, অভিষেক ডালমিয়া-র মতো ক্রীড়া প্রশাসকগণও রয়েছেন। অন্যদিকে ক্রিকেট দর্পণ ক্রীড়া রত্ন হিসেবে আরো একটি স্মারক সম্মাণ এই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই প্রতি বছর দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গক্রমে জানানো যায়, ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত এই মুহূর্তে যে সাতটি টুর্ণামেন্ট চালু রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি টুর্ণামেন্ট হ'লো - "ওয়ানডে টু ইনিংস টুর্ণামেন্ট" যা ক্রিকেট দর্পণ এর সম্পূর্ণ নিজস্ব টুর্ণামেন্ট। আরো ভালো করে বললে বলা যায়, এই টুর্নামেন্টের সম্পূর্ণ ভাবনা ও পরিকল্পনা ক্রিকেট দর্পণ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জয়দেব ভট্টাচার্য্য-র মস্তিষ্ক প্রসূত। করোনা তথা কোভিড-১৯ এর সময়ে বাইশগজে বা মাঠের খেলা বন্ধ থাকলেও বাইশগজ নিয়ে ভাবনা বন্ধ থাকেনি। তারই প্রমাণ স্বরূপ যেন এটি, সেই সময়েই এই টুর্ণামেন্ট নিয়ে পরিকল্পনা করে ক্রিকেট দর্পণ, এবং যাকে পরবর্তীকালে আইনী পরিভাষা অর্থাৎ টুর্ণামেন্ট বাই-ল'স এর আকারে নিয়মের বাঁধনে বাঁধেন ক্রিকেট দর্পণ আম্পায়ার উপদেষ্টা ও ক্রিকেট দর্পণ এর প্রধান আম্পায়ার এডুকেটর তথা প্রাক্তণ আন্তর্জাতিক আম্পায়ার ফ্রান্সিস গোমস। পরবর্তীতে এই টুর্নামেন্টের নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে যা কিছু পরিমার্জন-পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন করা হয়, সেটাও করেন সায়ন্তন ভট্টাচার্য্য এবং নির্বান কুমার বোস।

সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব বরেণ্য এবং কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার নিজে ওয়ানডে টুর্ণামেন্টকে আকর্ষণীয় করে তুলতে দু' ইনিংসে ভাগ করে করার কথা মিডিয়ায় ও জনসমক্ষে প্রস্তাব দিলেও, এটাই বাস্তব যে ক্রিকেট দর্পণ তার অনেক আগেই(২০২০-২১ মরশুমেই) এই ফর্মেটে টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা শুরু করে দিয়েছে। বর্তমান ২০২২-২৩ মরশুমে যা তৃতীয় বর্ষে পা দিয়েছে। পাশাপাশি এটাও বলার যে এই টুর্নামেন্টের নাম ৺ভূপেন্দ্র কুমার দে মেমোরিয়াল জুনিয়ার (অনূর্ধ্ব-২০) ওয়ানডে টু ইনিংস টুর্নামেন্ট" হিসেবে পরিচিত।

এছাড়াও ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত মহিলা টুর্নামেন্টটি ৺জগমোহন ডালমিয়া-র সহধর্মিনী স্বর্গীয়া চন্দ্রলেখা ডালমিয়া-র নামাঙ্কিত। টুর্ণামেন্টটি "৺চন্দ্রলেখা ডালমিয়া মেমোরিয়াল উইমেন্স টি-২০ টুর্নামেন্ট হিসেবে পরিচিত।

ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত আরেকটি টুর্ণামেন্ট, যা অনূর্ধ্ব-২১ বছরের ক্রিকেটারদের জন্য বিবেচিত। প্রথম বিভাগীয় এই টু-ডেজ লীগ টুর্ণামেন্টটি "স্বর্গীয় সন্তোষ রঞ্জন গাঙ্গুলী এবং স্বর্গীয়া লক্ষ্মী গাঙ্গুলী মেমোরিয়াল ট্রফি" নামাঙ্কিত টুর্নামেন্ট হিসেবেই পরিচিত।

ঠিক এই পরিসরেই অর্থাৎ ক্রিকেট দর্পণ আয়োজিত টুর্নামেন্ট প্রসঙ্গে কথা উঠলে যে কথাটি না বললেই নয়, তাহ'লো- ২০১০ এর জন্মলগ্ন থেকে যেমন ক্রিকেট দর্পণ তাদের নিজস্বতা ও স্বকীয়তা বজায় রেখেই ক্রিকেটকে বিষয় করে এই বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করে চলেছে, তেমনি আগামী দিনেও তারা তাদের সেই ভাবনাকে বজায় রেখেই কাজ করে যেতে চায়। এর পাশাপাশি তারা বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে সার্বিক মানোন্নয়ন এর স্বার্থে কারো সঙ্গে মিলিত ভাবে কাজ করতেও রাজি। এক্ষেত্রে যে কোনো উদার ও ক্রীড়া মনষ্ক ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলিত হ'য়ে, একসাথে কাজ করতে ক্রিকেট দর্পণ এর কখনো কোনো আপত্তি ছিলনা আর থাকবেওনা, এমন ভাবনাতেও তারা আছে।

আর ঠিক সেই জায়গা থেকেই অতি সম্প্রতি বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের স্বার্থে এবং সামগ্ৰিক ভাবে এই রাজ্যের ক্রিকেটের মানোন্নয়নের প্রেক্ষিতে ক্রিকেট দর্পণ আরো বড় পরিসরে কাজ করার অভিপ্রায়ে বা তাদের কাজের ব্যপ্তি ঘটানোর ভাবনাতেই এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম এক ঐতিহ্যবাহী ও স্বীকৃত ক্রিকেট প্রতিষ্ঠান তথা বিসিসিআই এর অন্যতম এক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাব এর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ শুরু করতে চলেছে। তার-ই প্রাথমিক ধাপ হিসেবেই এই বছরেই (২০২২-২৩ ক্রিকেট মরশুম) ক্রিকেট দর্পণ এর নিজস্ব টুর্ণামেন্ট অনূর্ধ্ব-১৯ এর টু-ডেজ টুর্ণামেন্টটিকে ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাব এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে করা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে টুর্ণামেন্টের নামের পরিবর্তন হ'য়ে "এন.সি.সি জুনিয়ার (অনূর্ধ্ব উনিশ) টু'ডেজ লীগ টুর্নামেন্ট" নামে পরিচিতি পাবে। অর্থাৎ আগামী দিনেও এন.সি.সি-র জন্য এই টুর্নামেন্টটি ধার্য করা হ'লো। পাশাপাশি আরো কিছু টুর্ণামেন্ট এবং কিছু ক্রিকেটীয় বিষয়কেও যা ক্রিকেট দর্পণ এর নিজস্ব বলে পরিচিত আছে, তাও আলোচনা প্রেক্ষিতে এন.সি.সি-কে দেওয়া হতে পারে (ক্রিকেট দর্পণ এর পক্ষ থেকে সেই মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে)।

প্রসঙ্গত আরো জানানো যায় যে, ক্রিকেট দর্পণ এর পক্ষ থেকে এক বা একাধিক যেটাই হোক, অর্থাৎ যে যে টুর্ণামেন্টকেই এন.সি.সি নামাঙ্কিত টুর্নামেন্ট হিসেবে আয়োজন করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হোকনা কেনো সেই সকল টুর্ণামেন্টের যৌথ আয়োজক হিসেবে ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাব এর পাশাপাশি ক্রিকেট দর্পণ পূর্বের মতোই থাকবে ও কাজ করে যাবে।

এর পাশাপাশি এও জানানো যায় যে ক্রিকেট দর্পণ এর দীর্ঘদিন এর একটি ভাবনা বা পরিকল্পনা ছিলোই, সেটা হ'ল- যেসকল জেলা বাস্তবিকই নিজস্বতা নিয়ে বাংলার ক্রিকেটের মূল স্রোতে নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারছেনা, যেসব জেলার সিএবি অ্যাফিলিয়েশন না থাকার কারণে তাদের জেলার ক্রিকেটাররা বাংলার বেশির ভাগ জেলার ক্রিকেটারদের মতো ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারছেনা, আর এর ফলে যেসব জেলার ক্রিকেট পিছিয়ে পড়ছে ও ক্রিকেটাররা আশাহত হচ্ছে, তাদের জন্য কিছু করার। কিন্তু বিগত ১৩ বছরে সেই ভাবনা থাকলেও তাকে বাস্তবায়ন করতে না পারার মূল কারণ অবশ্যই অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা।

আর সম্প্রতি আমাদের সেই পরিকল্পনা নিয়ে বাংলার ক্রিকেটের অন্যতম ক্রিকেট প্রশাসক তথা প্রাক্তণ সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া-র সঙ্গে আলোচনা হওয়ার পর তিনিও তখন সেই বিষয় নিয়ে নিজস্ব ভাবনা ও ইচ্ছে প্রকাশ করেন। আর সেই প্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এন.সি.সি-র সঙ্গে যৌথ আয়োজক রূপে ক্রিকেট দর্পণ ২০২২-২৩ এর মরশুমেই যৌথ আয়োজনে একটি আমন্ত্রণ মূলক সিনিয়ারদের ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট করবে যা "এন.সি.সি ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট সিনিয়ার টি-২০ ইনভিটিশনাল টুর্ণামেন্ট ২০২২-২৩" নামেই আয়োজিত হবে।

মূলত পাঁচটি জেলা নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টের সূচণা ৮ই এপ্রিল ২০২৩ এ। এন.সি.সি-র সঙ্গে ক্রিকেট দর্পণ মিলিত ভাবে ও যৌথ আয়োজনে ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট (সিনিয়ার) যে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করছে তাতে যে জেলাগুলি অংশগ্রহণ করছে তারা হ'লো- উত্তর বঙ্গের ৩ জেলা, যথাক্রমে কালিম্পং, দার্জিলিং ও আলিপুরদূয়ার। এছাড়াও ঝাড়গ্ৰাম ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলাও খেলছে। পাশাপাশি এই পাঁচ জেলার থেকেই বাছাই করে পাঠানো ক্রিকেটার নিয়ে "কম্বাইন্ড ইলেভেন" নামে আরেকটি দল গড়ে মোট ছয় দলীয় টুর্ণামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে প্রথমবার। এই টুর্ণামেন্টের লীগ পর্বে দুই ভেন্যু যথাক্রমে - আলিপুরদূয়ার এবং পূর্ব মেদিনীপুর এর হলদিয়া।

পরিশেষে জানানো যাচ্ছে যে, সীমাহীন সীমাবদ্ধতা নিয়ে যে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটির সূচনা এবং সূচনা পরবর্তী সময় থেকেই একাধিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এযাবৎকাল যে ক্রিকেট দর্পণ বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নানা কাজ করে আসছে, আজ তাদের সেই কাজকে মান্যতা ও সম্মাণ দিয়ে যদি কেউ ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানগত ভাবে ক্রিকেট দর্পণকে কাছে ডেকে নেয়, এবং একইভাবে বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের সামগ্ৰিক স্বার্থ ও মানোন্নয়ন নিয়ে ভেবে ক্রিকেট দর্পণ এর সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে চায়, তবে সেটাই হবে ক্রিকেট দর্পণ তথা সেই পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এযাৎকালের কাজের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। পাশাপাশি এজন্য ধন্য ও গর্বিতও।

তাই আজ বাংলা তথা দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এক ক্রিকেট প্রতিষ্ঠান তথা বিসিসিআই এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রূপে স্বীকৃত ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাব এর সঙ্গে ক্রিকেট দর্পণ একত্রিত হয়ে যখন যৌথ ভাবে ক্রিকেট বিষয়ে অন্তত কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছে তখন তাকে অবশ্যই মান্যতা দেবে। আর এই পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে দিয়েই যে আগামীদিনে সামগ্ৰিক ভাবে বাংলার ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের স্বার্থ আরো সুরক্ষিত হবেনা, সেটা কে ব'লতে পারে! বরং সেই আশা রাখা যেতেই পারে। আমরা তো রাখছি। আশা রাখুন আপনারাও,‌ আর বাংলার আপামর ক্রিকেট এবং প্রকৃত ক্রীড়ানুরাগীরাও ... এই অবসরে আমরা না হয়, আরো একটু এগিয়ে চলি...

১৩ বছরের যাত্রাপথে ক্রিকেট দর্পণ- এর মন্ত্র একটাই "চরৈ বেতি, চরৈ বেতি"

-জয়দেব ভট্টাচার্য্য